শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২২ পূর্বাহ্ন
মালদ্বীপে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা করা হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ সহ ৯ রাজবন্দিকে মুক্তি দেওয়া নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। তার সহযোগী আজিমা শুকুর সংবাদ মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন আজ সোমবার। এর ফলে ভারত মহাসাগরীয় এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির চলমান রাজনৈতিক সংকট আরো তীব্র ধারন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার ফলে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী এখন সন্দেহভাজনদেরকে গ্রেপ্তারে উচ্চ ক্ষমতা পেয়ে গেল। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এবং সরকারের মধ্যে অচলাবস্থার মধ্যে এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলো।
প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন নাশিদ সহ ৯ জনকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সোমবার বিচারকদেরকে তিনটি চিঠি লিখেছেন তাদের রায় ফিরিয়ে নিতে।
এর পরপরই রাষ্ট্রীয় টিভিতে তার সহযোগী শুকুর জরুরি অবস্থা ঘোষণার কথা জানান।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেন ইয়ামিন। এর আগে ২০১৫ সালের নভেম্বরে তাকে এক গুপ্তহত্যার চেষ্টার পর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন তিনি।
ওদিকে, সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ সহ ৯ রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া আদেশ বাস্তবায়ন ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মালদ্বীপের বিরোধীদলীয় নেতারা। সঙ্কট নিরসনে দেশটির প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিনের প্রতি চাপ প্রয়োগ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রতিবেশি দেশগুলোর সহায়তা চেয়েছেন তারা।
গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদসহ বিরোধীদলীয় ৯ নেতাকে মুক্তি দেয়ার আদেশ দেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের প্রশাসন বিরোধী দলীয় ৯ রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এর জেরে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের প্রশাসন মুখোমুখি অবস্থানে যায়। সুপ্রিম কোর্ট বলছে, বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশে করা হয়েছে।
রবিবারও সুপ্রিম কোর্ট ওই আদেশ বাস্তবায়ন করতে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু দেশটির এই প্রেসিডেন্ট নিজ অবস্থানে অনড় থেকে সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে বিরোধীদলীয় দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। রবিবার গভীর রাতে রাজধানী মালেতে বিরোধীদলীয় হাজার হাজার নেতাকর্মী বিক্ষোভ দেখান।
এর আগে রবিবার সকালের দিকে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ অনিল প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করতে সুপ্রিম কোর্ট চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করার পর মালদ্বীপ সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করে। তার ওই অভিযোগের পর সকালের দিকে দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজধানী মালেতে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবন সিলগালা করার পর দখলে নেয়।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই সঙ্কটের জেরে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিন। উত্তেজনা না বাড়াতে ও সঙ্কট দ্রুত সমাধানে ব্যবস্থা নিতে ইয়ামিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস।
গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে বিরোধীদলীয় নেতাদের মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া আদেশে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। অতীতে দুর্নীতির অভিযোগে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা ইয়ামিনের অভিশংসনের চেষ্টা করেছিল; তবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার বহিষ্কৃত ১২ সংসদ সদস্যকে সুপ্রিম কোর্ট স্বপদে বহালের নির্দেশ দেয়ায় ৮৫ সদস্যের সংসদের সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে ইয়ামিন নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল।
দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা ভিত্তিহীন বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে আদালত। এর ফলে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যত নির্বাচনে অংশ নেয়ার পথও উন্মুক্ত হয়েছে।
২০১৫ সালে সন্ত্রাসবাদের বিতর্কিত অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি নাশিদ।
মোহাম্মদ নাশিদের মালদ্বীভিয়িান ডেমোক্রেটিক পার্টি বলছে, প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ। মোহাম্মদ নাশিদের সঙ্গে ২০১৩ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচনে জয় লাভ করেন ইয়ামিন। তবে এই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে দেশের ভেতরে। নির্বাচনে জয়ের পর বিরোধীদলীয় অধিকাংশ নেতাকেই জেলে পুরেছেন তিনি।